বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৭

একরাত অভিমান


কমলারঙের শাড়ি ছিলো পরনে, আঁচলটা কাধ বেয়ে
কোমড়ের কাছে এনে বাঁধা। কেমন একটা জাদরেল ভাব মুখটায় আঁকা
চলার গতিতে স্পষ্ট তাড়াহুড়ো, নির্বাক অধর। কোথাও যাবার
আয়োজনে ব্যস্ত নিশিতা।
পুটলা পুটলী তৈরি, বড়সড় স্যুটকেস শুধু তার নিজস্ব
কাপড় চোপড়, কসমেটিকÑকয়েকটা নৈমিত্তিক টুকিটাকিতে পূর্ণ।

তার স্বামী নুহাশ, দরজার পাশটায় টেবিল যে ছিল এক ঘুণ ধরা
তার উপর বসে। চোখ জলে ছলছল, মুখে হাসি টানা
বউ এর প্রস্তুতি দেখে- আড়চোখে নিরীক্ষণ। যেন এই চলে যাওয়াতে
তার নেই কোন ভ্রোক্ষেপ। স্বামী-স্ত্রীতে সামান্য বিবাদ, কথা কাটাকাটি
তাই এই বিদায়ের আয়োজন এসেছে ঘনিয়ে।

তিন বছরের সংসার, ছেলেমেয়ে নেই-
পিছুটান মুক্ত। এতোবড়ো সিদ্ধান্ত গ্রহণে একটুও লাগেনি সময়।
নিশিতা বাপের বাড়িতে নেবে ঠাঁই, স্বামী যাক জাহান্নামে।

বাইরে বিকেল, মেঘগুলো সোনালি আবির মাখা। আকাশের চিলগুলো
একটাও নেই আকাশে।
বেরিয়ে যাবে নিশিতা, নুহাশের মৌনতা- ইজি চেয়ারে বসে
গালে হাত ঠেসা, জানালার ফাঁক দিয়ে উদাসীন দৃষ্টি দিগন্তের খোলামাঠে।

ছিলো একগোছা চাবি
নিশিতার আচলে বাধা। চাবি গোছা রাখতে গিয়ে ওয়ারড্রবের ছাদে
চোখে তার পড়লো একটা ছবি কাঁচ দিয়ে মোড়ানো
বিয়ের প্রথম বছর সেই যে গিয়েছিলো হানিমুনে, সেখানেই তোলা।
নুহাশ আর নিশিতা
একত্রে ঠেস দিয়ে বসা গাছের শেকড়ে, হাতে হাত ধরা।
মনে তার পড়লো কিছু স্মৃতি ভাসা ভাসা- বিদায়ের বেলা
ছবিটার পাশে দাঁড়িয়েই।

নুহাশের চাইছিল মন বলবে নিশিতাকেÑ‘অন্তত
আজ রাতটা থেকে যাও’ -তবু বলা হলো না।
চরম অভিমান, বউ এর কাছে যাবে হেরে
এমনটা হয় কেমনে...!
যাবার বেলায় নিশিতার মনে বারবার খেলা করে
একটা বিষয়। একবার, শুধু একবার বলতো যদি নুহাশ
‘যেয়ো না গো’- রাগে কিংবা অভিমানে, তবু যাত্রা এখানেই হতো ভঙ্গ।
দেখলো নিশিতা পিছু ফিরে ফিরে- নাবোধক ইশারা... তাও পেল না বেচারী
স্বামীর কাছ থেকে, তাই চলে গেল ভারী স্যুটকেস পিছু পিছু টেনে।

সন্ধ্যার খানিক বাদে গেলো সে পৌঁছে
বাবা মার বাসায়। নিশিতার অনাকাক্সিক্ষত আগমনে
পিতা মাতা শঙ্কিত- ‘কিরে...
নুহাশকে দেখছি না যে, রাগ করে এলি বুঝি?’ নিশিতা দিলো না
জবার কোন- শুধু রইলো মুখ গোমরা করে।

রাতে খাবার টেবিলে বারবার
গিরো গেলো এটে নিশিতার গলায়, খাওয়া হলো না। মনে পড়ে
নুহাশের স্মৃতি- কেন এই অভিমান।
এদিকে নুহাশ কেমনে করবে আহার নিশিতাকে ফেলে- এ কথা ভেবে
ছাদে করলো বিচরণ একাকি অন্ধকারে, খিদে গেল মিটে হাওয়া চিবিয়ে।

বিছানায় শুয়ে ঘুম এলো না চোখের পাতায়- পাশের বালিশ
খালি পড়ে আছে, স্ত্রী নেই ঘরে।
কী একটা বেদনা যেন কুঁকড়ে ধরলো নুহাশকে সহসা
ডিমলাইটের সবুজাভ অল্প আলোতে। সদ্য জবাই করা মোরগের মতো
ছটফট করে বারবার রাখলো হাত
খালি বিছানায়- নিশিতা যেখানে ঘুমায় নিরবে।
এদিকে নিশিতা ঘুমায়নি কোন রাত স্বামীকে জড়িয়ে না ধরে বুকে-
পতির সোহাগ তার ঘুমের মহা ঔষধ। এপাশ ওপাশ
করলো সে বই এর পাতা যেমন
উলটে বাতাসে, আঘাত প্রাপ্ত কেচুর মতো শ্বাসরুদ্ধ অস্তির।

মধ্যরাতে নুহাশ বসে টেলিফোন স্যাটটার সামনে
কয়েকটা চাপ বাটনে- নিশিতাদের বাসার নাম্বার। রিং দিতে গিয়ে
রেখেদিলো টেলিফোন কি জানি কি ভেবে। বউ এর কাছে যাবে হেরে
এমনটা হয় কেমনে...!
‘একটা কল ও তো দিলো না নুহাশ’- ভাবে নিশিতা
ক্ষণে ক্ষণে ল্যাম্পলাইট জ্বালিয়ে নিভিয়ে। মোবাইল মনিটরে নাম্বার টুকে
কল তবু দিলো না- এতো রাতে নুহাসকে ডিস্টার্ব
হবে না উচিৎ। দুজনার রাত গেল কেটে অসহ্য অনিদ্রায়।

খুব প্রভাতে সেজেগুজে
প্রস্তুত নিশিতা। মা বললো ডেকে- ‘নাস্তাটা খেয়ে যা, রাতে ভালো খাসনি।’
কে শুনে কার কথা, যেন নুহাশকেই বেশি প্রয়োজন
নাস্তার চেয়ে। এমন সময় কলিং বেলটা সুর করে
উঠলো বেজে, দরজা খুলতেই মাথানত নুহাশ ঢুকলো ঘরে।
‘এ কি বাবা তুমি, এতো প্রভাতে...!’ -বিস্মিত শ্বশুর মশাই, বিড়বিড় করে
বললো নুহাশ- ‘বউ এর কাছে হেরে যাওয়া, এ তো আর পরাজয় নয়।’

মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৭

প্রত্যাখ্যাত

:যেও না অমন
    পা চালিয়ে দ্রুত, খানিক দাঁড়াও
        কথা আছে।
:কী কথা বলবে বলো
    কান খোলা রেখেছি
        শুনতে ব্যাঘাত ঘটবে না।
:চটে যাও কেন এমন অকস্মাৎ
    শুধু তো দুটি কথা বলবো অনুক্ষণ
        তারপরই হবে প্রস্থান নিরবে।
:চটে গেলাম কই দেখলে
    তোমাকে প্রশ্রয় দিতে চাই না
        এর চেয়ে বেশি কিছু নয় তো।
:প্রশ্রয়...! হাসালে তুমি
    করুণা আমিও চাই না
        শুধু চেয়েছিলাম দু’দ- আলাপন।
:অনুমতি দেওয়া আছে
    চটপট বাসনার ঘটিয়ে নিবৃত্তি
        সাধু-সন্ন্যাসীর মতো পিছন দরজা দিয়ে কেটে পড়ো।
:হয়তো তোমারই জন্য সেদিন
কাঁটাগুল্মে ফুটেছিল মোহন গোলাপ, নেমেছিল গোধূলী
    সঘন স্বানন্দে, শ্রান্ত নদীর জলধারার ওপারে কাশবন
        কেঁপে উঠেছিল সমীরণে।
:আমি সাধারণ মেয়ে
    আমার জন্য ঘটবে না কোনকালে
        এইসব অতি মনোরম বিষয়াবলী।
:তোমারই জন্য, শুধু তোমারই জন্য
    ঘাস-নদীর বিশুদ্ধ ভালবাসা দেখেছিলাম, অঝর ধারায়
        কেঁদেছিল আকাশ, কদম মেলেছিল চোখ কদমশাখায়।
:ধুত্তুরি ছাই, ডেকেছো আমায় পিছু
    চাই না শুনতে এসব অকাজের কথা, অন্যকিছু
        থাকলে পারো বলতে শিগগির।
:তোমারই জন্য ফুটেছিল শাপলা দিঘীর কোমল জলে
    ঝরছিল বকুল তোমাকে দেবো বলে উপহার, আমার ভালবাসা
        বুকের ভেতর চপলা পাখির মতো করছিল উৎপাত।
:সে তোমার নিজস্ব বিষয়, আমাকে
        ওসবের মাঝে জড়িও না।
:অথচ তুমি তো ছিলে একদিন আমার
    শুধু আমার, তোমার সত্ত্বা তোমার ছায়া
        আমার এতোসব বিষয়ের মাঝে করে বিচরণ।
:থাক থাক, ওইসব পুরাতন প্রেম
    ভুলে যেও ভ্রমরা যেমন ভুলে ফুলকে
        মধু যোগাড়ের আয়োজন শেষে।
:তোমাকেই দেবো বলে সযতনে
    এই দেখো, এনেছি দিঘীর শ্বেত শাপলা
        ঝরা বকুলের সুঘ্রাণ মালিকা।
:এসবের কোন প্রয়োজন আছে কি
    তোমার সম্পদ রেখে দাও তোমারই কাছে
        বহু যতনের চেয়েও আরও অতি যতনে।
: নিলে না তুমি ক্ষণিকের উপহার
    আমার অনুক্ত ভালবাসা ঝরে গেলো নিঃশব্দে
        ঐ সব প্রভাতের প্রত্যাখ্যাত বকুলের মতো।

বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৭

অন্ধগুহার ক্ষ্যাপাটে

এদেশ আমার চামচিকার গন্ধবিদগ্ধ
  অন্ধগুহা, গলিতে গলিতে যার
নিঃসহায় মানুষজন শুকনো জিভ বের করা কান্ত জন্তু।
যুদ্ধার্জিত স্বাধীন নাগরিকেরা যে দেশের
অশ্বমেধের ঘোড়া, চোখ কানামাছি করা কলুর বলদ, থাকবেই-
দেখেও না দেখার ভান ধরে।

বালির উপর গড়ায় কারও রক্ত, যার মানবিক মূল্য
পায় যদি সে গাড়ির চাকায় ছিচকানো নোংড়া জলের সমান-
ধন্য জীবন। দুশ্চিন্তা রেখা কপালে সবার
ফুটে আছে ফুটিফাটা চোত-বোশেখি জমির মতন, ক্রন্ধনজয়মন্ত্র
ভুলে গেছে বাসিন্দারা সেই কবে।
তবু কেউ কেউ এরই মাঝে
এমনি চাটুকার, গায় শুনা গান প্রভুদের শেখানো সুরে, আর হাসে-
নিঃসীম তুষামুদি অট্টহাসি।
এসব দেখেই ক্ষ্যাপাটে আমি
তুলি অস্ত্র নিজেরই বুকের দিকে। স্বেচ্ছায় করি লন্ডভন্ড
আদিগন্ত রেললাইন ভীষণ ক্রোধে, ভাঙি নিজেরই হাতে গড়া
সীমান্ত নিজের।

এদেশ আমার চামচিকার গন্ধ বিদগ্ধ
অন্ধগুহা, আর এর বাসিন্দারা! কি বলবো, সহজ কথায়
ঘৃণা করতেও ঘেন্না লাগে। ঢের ভালো
এর থেকে আঙিনায় ভাঙা উনুনের পাশে ছায়ের গাদায়
লেজ গুটিয়ে চক্ষুবুজা একলা কুকুর।

প্রভাতের প্রথম পাখি

হুলো বিড়াল তিনবার শুঁকলো গন্ধ
পুরনো দেয়ালের, তারপর লেজ উঁচু করে দিলো ছিটিয়ে
মূত্র কয়েক ফোটা। থাম্বার পাদদেশে চট বিছিয়ে
বসেছেন যে ল্যাংড়া ভিখারি তার হাতের লাঠি
বড়োবেশি দেখালো ভয় বিড়ালটিকে
বাতাসে দুপাক ঘুরে।

‘ছাই নেবে গো ছাই’- যিনি করছেন চিৎকার গলা ফাটিয়ে
তিনি আর কেউ নন, বস্তিপাড়ার সেবিনা বেগম, যার বড় মেয়ে
তিন বেলা মেজে দেয় এঁটো থালাবাটি
এর তার ঘরে, যার ছোট ছেলে
পিঠে ঝুলি নিয়ে কুড়ায় কাগজ, পুরনো বোতল, ভাঙ্গা-ছেড়া
প্লাস্টিক আর আস্তাকুড়ের ঝিম ধরে পড়ে থাকা নেড়িকুত্তাকে
ঢিল ছুড়ে মজা পায়।
‘ছাই নেবে গো ছাই’- যার প্রাণের স্বামী রাজমিস্তিরি ছিলো
ছাদ থেকে পরে গিয়ে মরে গেছে দুবছর হলো। কি সহজেই
চলে যায় সময় আঙুলের ফাঁক গলে পড়ে যাওয়া বালির মতো,
চাইলেই ধরে রাখা যায় না তাকে।

রাস্তার মোড়ে চায়ের দোকান
ক্যাটলির নলে রেশমী ধোঁয়ার নাচ, ক্রিং ক্রিং বেল বাজিয়ে
গেল পত্রিকার গাড়ি। কাকেরাই হয়তোবা প্রভাতের প্রথম পাখি
যারা ডেকে ওঠে অট্টালিকার সবচেয়ে উঁচু খুঁটিটায় বসে
আর উড়ে যায় এ-ছাদ ও-ছাদ, কৃষ্ণপালকে
সূর্যকিরণ মেখে।

বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০১৭

রক্তফিনকীস্নাত সবুজ জামা

ভালবাসার জন্য মানুষ কী না পারে-
কী  না পারে বলুন?
সাত সাগর তেরো  নদী পার!
হোহ... সে তো
সামান্য, ফুলের রেণুর মতো যৎসামান্য।

হানাদার বাহিনীর হাতে
ধরা পড়েছিল একজন
সোনার মানুষ, মুক্তিকামি সোনার মানুষ।
শত অত্যাচার, তবু
মুখ খুললো না সাহসী সে তরুণ।
যদিও বেয়নেটের খোঁচা
লাগছিল উরুতে, বুকে স্টেনগান ধরা
মুখের উপর কটু প্রশ্ন-
‘আমাদের জিজ্ঞাসার
জবাব চাই, অগত্যা গুলি করে মারবো তোমায়।’
চূড়ান্ত নির্ভীক বলে, বুকভরা
খাসা দেশপ্রীতি ছিল বলে-
নিচু হয়ে চুমু খেল
স্বদেশের মাটিকে, প্রেয়সীর গালে শেষ চুম্বনের মতো।
তারপর উঠে দাঁড়ালে
সটান, ঝাকড়া চুলের বাবরি নাড়িয়ে বল্লে-
‘যথেষ্ট প্রস্তুত আছি, আমার রক্ত
প্রিয় দেশটাকে দেবে স্বাধীনতা’।

বাতাসের কলরব
থামলো হঠাৎ। ছিঁড়ে গেল মালার আদলে ওড়া
পাখিদের ঝাঁক; ভিজে গেল ঘাস, শ্যামল মাটি।
ভেজা পতাকার মতো
রক্তফিনকীস্নাত সবুজ জামা, আর
নক্ষত্ররূপী জ্বলজ্বলে জামার বোতাম।

অপারগ সাংবাদিকের ক্যামেরা

ক্যামেরা ঘুরিয়ে নিন-
অর্থাৎ এক কথায় ছবি তুলতে করছি নিষেধ
আপনাকে, সাংবাদিক সাহেব। গলায় ঝোলানো এই ছবি তোলার যন্ত্রটা
এর উপর আপনি আস্থা রাখুন কী করে এতো, কী আছে এর ততো
শক্তি, অথবা কারিশমা
প্রকাশ অযোগ্যকে ফুটিয়ে তোলার!
বড়জোর আমার হাতের
তরতাজা রাইফেল, প্রাণঘাতি ঝকমকে কার্তুজ, মাথায় গামছা বাঁধাই
বাবরি চুল, বটের বীজের মতো জ্বলজ্বলে বিনিদ্র চোখ, বিজয়োন্মুখ মুখ
আর হাস্যোজ্জ্বল ফুল্যঠোঁটের ঝলমলে ছবি তুলে নেওয়া ছাড়া?

ক্যামেরা ঘুরিয়ে নিন- অর্থাৎ এক কথায়
ছবি তুলতে করছি নিষেধ আপনাকে, সাংবাদিক সাহেব।
পৃথিবীর কোনো কলামিস্ট কোনো যুগে
পেরেছে কি টুকে নিতে ক্ষমতামাতাল বর্বর প্রভূর
বজ্রকঠিন চোখ রাঙানোকে অগ্রাহ্য করে যে বিদ্রোহী ছিঁড়ে দু’হাতের শৃঙ্খল
অথবা দাসত্বের দলিল তার আপাতালাকাশ আক্রোশ পেরেছে কি
টুকে নিতে সংবাদপত্রের সজীব পাতায়?
কলম যতই বলধর হোক, কোনো কবি
কোনো কালে পেরেছে কি লিখে নিতে
বেপরোয়া লড়াকু যোদ্ধার নাছোড়বান্দা আদর্শ, মৃত্যু মুখোমুখি দাঁড়িয়েও
পিছু না হাঁটার অঙ্গীকার, শোষক রাজার নিষ্ঠুর একতার বিরুদ্ধে অসহযোগ
পেরেছে কি লিখে নিতে তার নিজস্ব খাতায়?
আর ঝানু চিত্রকর আকাশের মতো প্রশস্থ ক্যানভাসে
এঁকে দিতে বিক্ষুব্দ দেশপ্রেমিকের হৃদপি-
যে স্পন্দনে কাঁপে
সেই ঝনঝন ঝনাৎকার সম কম্পন রেখা পেরেছে কি
এঁকে দিতে রং তুলির খোঁচায়?
ক্যামেরা ঘুরিয়ে নিন- অর্থাৎ এক কথায় ছবি তুলতে
করছি নিষেধ আপনাকে, সাংবাদিক সাহেব।

আপনার ক্যামেরার এপার্চার, আকাশচুম্বী জুমিং কৌশল
অত্যাধুনিক অভ্রভেদী ল্যান্স, পারবে না তুলে ধরতে আমার বুকের
লোকানো বিপ্লব, মুখের হাসির আড়ালের ক্রোধ, বাহুর পেশির সঞ্চিত শক্তি
পারবে না তুলে ধরতে ডিমকুসুম রক্তিম নয়নের
নেপথ্য তথ্য, আর মুষ্ঠিবদ্ধ আঙুলের বেষ্টনিতে যে ঝটিকাতুল্য চঞ্চলতা
নিয়ম না মানা উল্লাসে নাচে তার স্বতন্ত্র মুদ্রা। জানি....
আপনার ছবি তোলার যন্ত্রটা কারিশমা যতই দেখাক না কেন
বড়ো অপারগ আমার বুকের পাঁজরে
প্রতিশোধের যে উন্মত্ত দামামা বাজে
তার সুর, মগজের ভাঁজে
বিমূঢ় আস্ফালন নয়, যে দুর্দমনীয় বজ্রের কানাকানি
তার ভয়ংকর বহিঃপ্রকাশে বড়ো অপারগ। তাই...
ক্যামেরা ঘুরিয়ে নিন- অর্থাৎ এক কথায়
ছবি তুলতে করছি নিষেধ আপনাকে, সাংবাদিক সাহেব।

প্রহরীরা প্রহরে প্রহরে

সবুজ ঘাসের বুকে তামাটে তাবু, কাঁটা তারের বেড়া
সীমান্ত এলাকা এটি। ঝরে আছে কিছু
মর্মরে মরা পাতা
পাহাড়ি চাম্বলের, শৈবাল ঢাকা পাথুরে ধূসর ঢিবিতে।

এখানে যাদের গেরস্থালী
পায়ে ওদের চামড়ার ভারী বুট, হাতে দূরবীন, কোমরাবদ্ধে
ধাতব পানির বোতল।
ওরা ডুয়োপিঁপড়ের আদর্শে কর্মঠ। ওরা মৌমাছির মতো
সুশৃংখল দলবদ্ধ, ভিম্রোপোকার মতো হিংস্র আক্রমণাত্মক।
সাথে যে কুকুরটা ওদের
এলসেসিয়ান প্রজাতির, ভীষণ সিয়ানা (দাঁতগুলো
নেক্রের কাছ থেকে ধার করা, খক খক চিৎকার যেন
হিজরা বাঘের হুংকার) তেপান্তরের প্রান্তরে
তার কান রাখে খাড়া
দুবৃত্তের সতর্ক আগমনী শুনবে বলে, নাক রাখে তৎপর
নিতে শত্রুর ঘ্রাণ। আকাশে ওদের
পোষমানা সোনালি ঈগল প্রহরীর দৃষ্টি নিয়ে ঘুরে চক্রাকারে-
প্রহরে প্রহরে দেয়
প্রতিকী সংকেত কর্কশ স্বরে এবং তড়িৎ ছোঁ।

আমার যে ভাই ছ’মাস বয়সী সন্তানের মুখে দুগ্ধ যোগাতে
কাঁটাতার টপকাতে চায়
ওরা তার লাশ ফেলে রাখে ঝোপের আড়ালে
দুমড়ানো কদলীবৃক্ষের মতো। আমার যে বোন বৃদ্ধ বাবার
হাঁপানী রোগের ডাক্তারি খরচ মেটাতে শর্তবদ্ধ পাচারকারীর খপ্পরে
ওরা তার মরদেহ ঝুলিয়ে রাখে
তারের বেড়ায় জানালা উগলে ছোঁড়া উচ্ছ্বিষ্ট যেমন।
শান্তির সফেদ পায়রা ওড়াতে গিয়ে সন্ধি-সীমান্তে
কখনো-সখনো ওড়ায় ওরা
নখারো শকুন, স্নিগ্ধ পতাকার বদলে রক্তাপ্লুত ওড়নি।

শনিবার, ২০ মে, ২০১৭

প্রথম পরিচয়

সেলিম ভাই, আপনার জন্য আমার ধাঁধাঁ, আচ্ছা বলুন তো...
আমাদের প্রথম দেখাটা কখন কোথায় হয়েছিল?
মুখ কাচুমাচু করার কিছু নেই, জবাব আমিই বলি-
এগারোতম ছড়া উৎসবে আপনার হাতে মাউথপিস, আমার হাতে
একটা চিক্কন কাগজ, হিজিবিজি কাটাকাটি সমেত কী সব লিখা।
আপনার মাথার গেরুয়া হ্যাটটা
বাঁ হাতে ঠিক করে নিয়ে বললেন,- ‘এবার স্বরচিত
কবিতা পাঠ করতে আসছে...’
হ্যাঁ, প্রথম একবার আটকে গিয়েছিলেন, তারপর ভুলের মতোই
শুনালেন সবাইকে আমার নাম। আমি তখনও অর্বাচীন এক আঁতেল-
কবিতাপত্র হাতে ঠকঠক কাঁপছি এবং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাঁশিতে
সাফ করছি গলা।

সামনে অজস্র শ্রোতা, আমি কবিতা পাঠ
শুরু করলাম। কেউ কান চুলকায়, কেউ হাত চুলকায়, কেউ মাথার চুলে
আঙুল বোলাতে বোলাতে পায়ের জুতা ঠিক করে। আবার কেউ কেউ
ভ্রুয়ের পাশে রাজ্যের যন্ত্রণা নিয়ে কুচকানো কপালে তাকিয়ে থাকে
আমার দিকে, তাকিয়ে থাকতে হবে-
তাই হয়তো তাকিয়ে থাকা।
মনে মনে ভাবি, কবিতা নির্বাচনে
ভুল করলাম না তো...! প্রেমের কবিতা হলে
ভালো হতো, কিংবা হাসির ছড়া। চোখ বন্ধ করে
কাঠের পুতুলের মতো অনড় বসে শুনতো সবাই এক্কেবারে প্রত্নযুগের
কালো পাথরের মূর্তি যেমন; তারপর হাসতে হাসতে
পড়তো গড়িয়ে এদিক ওদিক।
আমার যে প্রেমিকা, আমি যার বাড়ির পথে যাবার বেলায়
খোলা জানালায় কমসে কম তিনবার চোখ রাখি, তাকে উদ্দেশ্য করে
দাঁত কটমটিয়ে বললাম-‘অন্তত তুমি তোমার
ওড়না ধরে টানাটানি বন্ধ করো, অনুরোধ করি, আমার প্রতিভাকে
মাঠে মরতে দিও না। আমার অপমান তো তোমারও অপমান।’

একজোড়া জালালী কবুতর হাততালি দেওয়ার মতো শব্দে
উড়ে গেল হলরুমের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে, কারও দৃষ্টি
গেলো না সে দিকে।
একটা শিশু দেয়ালের লেজকাটা টিকটিকিটাকে
তাড়া করতে গিয়ে ছুঁড়ে মারলো হাতের বাঁশি, সেদিকে দিলো না
মনোযোগ কেউ।
ছোট বেলায় চোখে কাঁচপোকা পরে যেমন জল ঝরছিল
তেমনি টলমল করে উঠলো আমার চোখ। সবার দৃষ্টি
এবার আমার দিকে, শুধুই আমার দিকে...
আমি সেলাই কলের নিরবিচ্ছিন্ন ঘূর্ণয়মান চাকার মতো
মাইক ফাটিয়ে অনর্গল বলে গেলাম-
‘হে মাটি... হে স্বদেশ... হে মায়ের অশ্রুসিক্ত
পিতার কবর, ওগো পূর্বপুরুষের গলিত লাশে উর্বর পুণ্যভূমি।
যতক্ষণ হৃৎপিণ্ডে রক্ত আছে, যতক্ষণ ঘাড়ের উপর মাথাটি দণ্ডায়মান
কসম তোমার- যে লুটেরা লুটে নেয় তোমার সুখ, যে কুলাঙ্গার
চেটে খায় তোমর সম্ভ্রম, তোমার দুর্দিনে
যে দুর্বৃত্ত বগল বাজিয়ে হাসে তোষামোদি হাসি
বিরুদ্ধে তার রুখে দাঁড়াতে গিয়ে
মরণ যদিও আসে- লড়ে যাবো, লড়ে যাবো, লড়ে যাবো।’

সেলিম ভাই, সেদিনই আপনার সাথে
আমার প্রথম পরিচয়।


রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৭

ব্যর্থ ডুবুরী

চেয়েছিলাম একটি বেগুনী ফুল, তুমি এনে দিলে ঝুলবারান্দায়
ঝুলিয়ে রাখার মতো দুটো অর্কিড-চারা নারকেলের খয়েরী মালায়।
সকাল বিকাল আমি জল ঢালি খুব যতনে- আর তুমি
অফিসে যাবার আগে একবার পাতায় পাতায়
বুলিয়ে যাও হাত, ফিরে এসে আরবার ধরো। যেন পিতা
তার চঞ্চল কন্যার ববকাট চুলে স্নেহের আঙুল চালায়।
যেদিন ফুটলো প্রথম ফুল তুমিই খুশি
হলে সবচেয়ে বেশি।
আমাকে একেবারে কোলবালিশের মতো আড়কোলে তোলে
কপালে খেলে খপাৎ খপাৎ চুমু, আর বার বার তাকালে
হালকা হাওয়ায় কাঁপা প্রজাপতির পাখার মতো
ছিটছিট অর্কিড পাপড়িগুলোর দিকে।
আমি তো জানি কতো যে ভালো তুমি বাসো আমায়। তাই আমার
একাকীত্ব কাটিয়ে দিতে দিলে উপহার
খরগোশ একজোড়া, একটি ধবধবে সাদা
অন্যটি সাদায় কালোয় মিশ্রিত
যাদের লালন করি আমি আপন শিশুর মতো
গালে গাল মিশিয়ে- যেন আমিই তাদের মা। মুখে তুলে দেই কতো
চাকচাক করে কাটা গাজরের ফালি, বাধাকপির কচি সবুজ পাতা।
আমার কোন আবদার রাখেনি অপূর্ণ তুমি। আমিই কেবল পারিনি...
মনে কি পড়ে... চেয়েছিলাম
পদ্মার ইলিশ-সর্ষে ভাজি? তুমি আমাকেই নিয়ে গেলে পদ্মায়
জোয়ারের বেলা জেলেদের নৌকায়
উঠে নিজের হাতে ধরলে ইলিশ। যে ইলিশ ভেজেছি
পহেলা বৈশাখে উত্তপ্ত উনুনের পাশে দাঁড়িয়ে আর আঁচলে মুছেছি
গলার ভাঁজে জমা রূপালি মালার মতো ঘাম। তখন তুমি
কোমর জড়িয়ে ধরে কামড়ে দিলে কান, আর হাতের আঙুলে
এক চিমটি সর্ষে ইলিশ মুখে নিয়ে বললে-
‘বড়ো মধুর হয়েছে আমার
রাধুনীর রান্না।’-মনে কি পড়ে? মনে কি পড়ে?
অথচ আমি বারোটি বছর ধরে
তোমাকে প্রতিদান কিছু দেবো বলে কতো যে চাই- যেমন একটি সন্তান,
তবু পারি না দিতে। হাজার হাজার মাইল সাঁতরে এসে আমি যেন
অতলান্তিক সমুদ্রপুরী থেকে শূন্য হাতে উঠে আসা ব্যর্থ ডুবুরী কোন।
তুমি যখন আমাকে খুব খুব খুব বেশি ভালোবাসো...
ব্যর্থতার গ্লানী আর অপারগ অপরাধের ভার
বুকে নিয়ে গলায় কলস বেধে ডুবে মরতে ইচ্ছে করে আমার।

ত্রিদীপ

এক.
বুকের ভেতর প্রজ্জ্বলিত বারুদের ক্ষোভ, আগুন যদি না জ্বলে
তবে নিজেকে পুড়িয়ে যোগাবো আলো।
জীবনকে ঢেলে সাজাবার ডাক দিয়ে যাই-
‘পথ নাই আর পথ নাই
অন্ধকারে অগ্নীশিখা জ্বেলে দূর করতেই হবে কালো।’
দুই.
দুর্ভিক্ষের আঁচড় লেগেছে যাদের গায়, তারা কি তবে
নিঃসম্বল হয়েই মরবে সবে....?
ক্ষুধার্তের বোবা কান্না আর বঞ্চনার দীর্ঘশ্বাস শুনেও
ত্রিদীপ হাতে ক্রুদ্ধ দেবতা দেবালয়ে নিরব দাঁড়িয়ে রবে...!!
তিন.
জালিমের দল ছাউনী গেড়েছে আমাদের অঙ্গনে
প্রদীপের মতো উপকারী আলো বিলাবার দিন আর নয়...
বারুদোত্তাপে জ্বলে উঠবার এসেছে কঠিন সময়।

খোকার জন্য জব্দ

আমার খোকা তোমার কোলে আসবে বলে যখন
পেটের ভেতর এদিক-ওদিক হাত-পা ছুড়ে মারে
আমার তখন সারা শরীর শিকলমুড়ে বাঁধা
বন্দী আছি স্বৈরাচারীর অন্ধ কারাগারে।
দেশটা এখন জব্দ ভীষণ শোষক শ্রেণীর হাতে
খোকার জন্য এ দেশটাকে মুক্ত করতে হবেই
অরাজকতার দম্ভ ভাঙতে মৃত্যু যদিও আসে
জন্মদাতা হওয়া আমার সফল হবে তবেই।
তোমার মাথার সিঁথির সিঁদুর হয়তো যাবে মুছে
আমার চিতার অগ্নিশিখা জ্বলবে খাঁ খাঁ স্বরে
হয়তো হঠাৎ আমার খোকা শিখবে হামাগুড়ি
দন্তবিহীন তার হাসিতে শিউলি পড়বে ঝরে।
যেই কথাটি বলতে আমার কণ্ঠরুদ্ধ আজ
বজ্রকণ্ঠে আমার খোকা সেই কথাটি কবেই
স্বাধীনতার মুকুট আনতে শিকলবন্দী আমি
আমার খোকা স্বাধীন হতে অস্ত্র হাতে লবেই।

সময়টা ঘর বাঁধবার

সময়টা ঘর বাঁধবার। খুব বেশি শীত নেই এখন
এমন কি খুব বেশি গরমও না। এখনো বৃষ্টি ঝরে না তেমন-
তাই পথে নেই কাদা, হাটুজল।
শুষ্কতাও এতো বেশি যায়নি বেড়ে-
দিকে দিকে ধুলো আর ধুলো উড়বে কেবল।
সময়টা ঘর বাঁধবার। ফাগুনের হাওয়া লেগে কাঁপছে ভূবন
ডালে ডালে পাখি আর বনে বনে জন্তুরা
সঙ্গী খুঁজতে ব্যাকুল এখন।
গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন মিস্তিরি, কখন যে কার ঘর বাঁধবার
পড়ে প্রয়োজন...!
ইট-কাঠ-লোহা আসছে দেদার। যাতায়াতে বাধা নেই
নেই অসহ্য দূর্গমতা পথের-
গলিতে গলিতে ঘুরছেন ঘটক সাহেব, উপযুক্ত
কপোত-কপোতী পেলে বেঁধে দেবেন জোড়। নতুন সম্বন্ধ মানেই
নতুন একটি ঘর।
ঘটক কি তবে মিস্তিরি...? নাকি দুজনেই ঘর বাঁধবার কারিগর...!
শোনা যায় ঘোষণাধ্বনি, বাতাসের বুক চিড়ে
কারও মৃত্যু সংবাদ শুনিয়ে যাচ্ছে মাইক। একটি নতুন করে
ঘর বাঁধতে হবে। নতুন একটি কবর মানে নতুন একটি ঘর।
আজরাইল কি তবে ঘটক, নাকি মিস্তিরি...? নাকি ওরা সকলেই
ঘর বাঁধবার কারিগর..!

যুদ্ধ ফেরত

যুদ্ধ কোন ছেলে খেলা নয়-
এ বিষয় ছেলেটার ভালো করে জানা। ওর টগবগে রক্তের
প্রতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে সর্বক্ষণ
লেগে আছে দাউ দাউ সংগ্রামী অগ্নি।
বুনো বেবুনের মতো ডালে ডালে নেচে বেড়ানো
চটপটে, দাঁত খিচিমিচি করে হাসা ছেলেটা-
নিশানা ওর যথেষ্ট তীক্ষ্ণ, নির্ভুল; প্রতিজ্ঞা ওর মৃত্যুর মতো
অমোঘ, অপরিবর্তনীয়। কেননা তার শৈশব কেটেছে
মারবেল আর ডাঙ্গুলী খেলে।
মালিকের চোখ ফাঁকি দিয়ে লাঠি ছুঁড়ে আমপাড়া ছেলেটা
তাই বুঝি পেরেছিলো-
অজস্র পাহারাদারের দৃষ্টিতে ছানি ফেলে চুপিচুপি ছিনিয়ে নিতে
হানাদারদের কার্তুজ, আর কী নিপুণ লিচু চুরি করা হাতে
তুলে নিতে ঠসঠসে আতার মতো মারাত্মক গ্রেনেডগুলো।
ছেলেটা দেখেছে বহুবার
তার মাকে, পান খেয়ে ঠোঁট লাল করে রাখা রত্মগর্ভা মাকে-
পিক ফেলতে গিয়ে শনের বেড়ায় আঙুলের চুন মুছতে।
মায়ের সে আঙুলের ছাপ, চুন মাখা টিপসই
আজও তার চোখে ভাসে বর্ণখচিত ব্যানারের মতো, যেন সেই
শনের বেড়াটি বিপ্লবের প্রতিবাদী পোস্টার।
যুদ্ধ সে যতোই স্থায়ী হোক, আর রক্তক্ষয়ী, ঘাতকের মুখে
চুনকালি মেখে থুথু ছিটিয়ে
বন্দুকের নলে পত পত বাংলার পতাকা দুলিয়ে, বনে ফেরা
বাঘের মতো ঘরে ফিরবেই ছেলেটা। ঘরে ফিরবেই ছেলেটা
সেই বোনটির জন্য- যে বোন বিছানায় হুমড়ি খেয়ে কান্না ছাড়া
কিছু আর পারে না, সেই মায়ের জন্য
ঘরে ফিরবেই ছেলেটা- যে মা জানালায় পথ চেয়ে বসে আছে
সন্তানের, আর যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে না নিতেই
অতর্কিতে যে বাবাকে তুলে নিলো হানাদার বাহিনীর জীপ
তার জন্য তার আদর্শকে টিকিয়ে রাখার জন্য
সমগ্র বাংলাদেশটা তাবিজ সম গলায় ঝুলিয়ে
কেশর ফোলানো সিংহের মতো ঘরে ফিরবেই ছেলেটা।

ভাঙনের ঝড়

আসমানের নীলে কিছু মেঘ ঘোরে একা
কিছু বৃষ্টি ঝরে অশ্রু হয়ে অঙ্গনে
জানালা খুলে দেখি আলোটা বিবর্ণ
বাতাস খেলা করে কাননের ফুলে নিজমনে।
সবুজ পাতারা গুচ্ছবদ্ধ তবু নীরব অসহায়
আঁধারটা মনে হয় অনন্ত অসীমের সীমানায়।
স্মৃতির রোমন্থনে রাত ফুরায় বিছানায় নির্ঘুম
কষ্টগুলো ফেরারি বাদুড়ের মতো নিশাচর
কিছু বাসনা রয়ে যায় অপূর্ণ আজীবন
নিঃস্বহায় দিনগুলো অসহ্য অবিনশ্বর।
তবে কি ভাঙনের ঝড় এ জীবনে দিয়েছিল হানা
তা না হলে এত কিছু কেমনে হলো জানা!!

বিপ্রতীপ

খাঁচার পাখি সুখ খুঁজতে পালিয়ে গেলো বনে
মুক্ত বনে খাঁচার কথাই পড়ছে কেনো মনে!!
ঘরের বধূ ঘর ভেঙেছে শান্তি খুঁজতে শান্তি
শান্তি তো নেই, স্বামীর স্মৃতি বাড়িয়ে দিলো ক্লান্তি।
হারিয়ে গেলেই বুঝতে পারি- যা ছিলো তাই ভালো
যা ছিলো না খুঁজতে তাকে গিয়েই তো হারালো।

কোনোদিন আর ভুল হবে না

কোনোদিন আর ভুল হবে না, আপনি বলতে ঠোঁটের ডগায় আর
তুমি বলা এসে যাবে না।
এই কান ধরে বলছি গো, মাথা ছুঁয়ে বলছি- আপনার পথের পানে
আর চেয়ে থাকা হবে না।
আর কোনোদিন আমি তাকাবো না আড়চোখে, আপনি যতই পরে আসুন
নতুন শাড়ি। কপালের টিপ যদি ভুল করে অস্থানে হয়ে যায়
ইশারায় আর আমি দেখাবো না...
আপনি বলতে ঠোঁটের ডগায় আর
তুমি বলা এসে যাবে না; কোনোদিন আর ভুল হবে না।
আপনি যদি আমাকে রেখেই চলে যান চুপিচুপি, চলে যান
কবিতা পাঠের আসর ছেড়ে। এই মাটি খেয়ে বলছি গো, কিড়া কেটে বলছি-
আর রাগ করে আমি মুখ ফোলাব না...
আপনি বলতে ঠোঁটের ডগায় আর
তুমি বলা এসে যাবে না; কোনোদিন আর ভুল হবে না।
আমি তো কারো টাকাতে কেনা গোলাম নই, নিজেকে দেইনি বেচে
অন্যের হাতে। কেন আপনারে ভেবে বৃথা হই উচাটন- এই মন
আর কারো মনোমত চলবে না...
আপনি বলতে ঠোঁটের ডগায় আর
তুমি বলা এসে যাবে না; কোনোদিন আর ভুল হবে না।

বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৭

অফিসে যাবার বেলায় আমি আর বাবা

হাতে পায়ে লোশন মালিশকালে পড়লো মনে
বাবা তো এ বস্তু মাখেনি কখনো গায়ে...!
নাকে মুখে ছাকা ছাকা সরিষার তেল মেখে বলতেন-
‘খাঁটি জিনিস, বড়ো উপকারী, চোখে ধরলে আরও ভালো’
সে যুগের মানুষ ছিলেন কি না
এ যুগের কি বুঝবেন...! অথচ লোশন
তখনো দোকানে পাওয়া যেতো ঠিকই।

জেল মাখা চুলগুলো পরিপাটি আঁচড়াতে গিয়ে দেখি
আগেকার আয়নাটা ছিলো না তো এতো বড়
আর এতো মসৃণ...! ছিলো একফালি ভাঙা কাঁচ, তাতেও আবার
প্রতিবিম্ব বিকৃত। বাবার মাথায়
শুষ্ক চুল, চিরুণীর দাঁত কটা বিলীন, নতুন যোগানোর
নেই আয়োজন- টানাপোড়নে এমনি সাদামাটা বেঁচে থাকা।

রিক্সাতে উঠে যাই অনায়াসে, শুধাই না ভাড়া
বাবা ঠিকই চড়তেন দাম দড় কষে, যেন যাত্রা শেষে
ধূর্ত চালক না পারে খসাতে
একটি টাকাও বেশি। কিংবা রাজ্যের পথ
পায়ে হেঁটেই দিতেন পাড়ি, তবু
পকেটের টাকা পকেটেই থেকে যাক- এই যেন পণ।

সেন্টের ঘ্রাণমাখা জামা, সিগারেট ফুকে ফুকে চলি
পথের ভিখারি যেই চায় দুটো পয়সা হাত বাড়িয়ে
অমনি দিলাম রাম ধমক, অকথ্য গালাজ তো আছেই।
বাবা তাকে ফেরাতেন খালি হাতে
তবু ধমকটা দিতেন না; আর তার কাছে সিগারেট ফুকা মানে
অকাতরে অর্থ ওড়ানো। অল্প আয়ের লোক-
বাউন্ডুলে তোড়জোড় তাকে কি মানায়...?

অফিসে ঢুকেই দেখি বেশুমার মক্কেল প্রতীক্ষা গুণে,
চেয়ার টেনে বসতেই টেবিলের আবডালে চলে আসে টাকা।
ঘুষ বললে মন্দ শোনায়, বাঁ হাতের কারসাজি
ডাকি আমি এ-কে।
এমন সুপটুতা ছিলো দুষ্কর বাবার পক্ষে
অতি ভীতু ব্যক্তির দ্বারা হবে কেন
এ তো নির্ভীক সওদা...!
হয়তো তিনি বলতেন- ‘এ কাজ করার আগে
মরণ দিও প্রভু, তবু ঘুষ নয়।’
বাবাটার লাগি বড়ো মায়া হয়, জীবনটা তার
কোনদিন উপভোগ করা হলো না। সে যুগের মানুষ ছিলেন কি না
এ যুগের কি বুঝবেন...!

বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০১৭

কোনোদিন আর ভুল হবে না

কোনোদিন আর ভুল হবে না, আপনি বলতে ঠোঁটের ডগায় আর
তুমি বলা এসে যাবে না।
এই কান ধরে বলছি গো, মাথা ছুঁয়ে বলছি- আপনার পথের পানে
আর চেয়ে থাকা হবে না।
আর কোনোদিন আমি তাকাবো না আড়চোখে, আপনি যতই পরে আসুন
নতুন শাড়ি। কপালের টিপ যদি ভুল করে অস্থানে হয়ে যায়
ইশারায় আর আমি দেখাবো না...
আপনি বলতে ঠোঁটের ডগায় আর
তুমি বলা এসে যাবে না; কোনোদিন আর ভুল হবে না।
আপনি যদি আমাকে রেখেই চলে যান চুপিচুপি, চলে যান
কবিতা পাঠের আসর ছেড়ে। এই মাটি খেয়ে বলছি গো, কিড়া কেটে বলছি-
আর রাগ করে আমি মুখ ফোলাব না...
আপনি বলতে ঠোঁটের ডগায় আর
তুমি বলা এসে যাবে না; কোনোদিন আর ভুল হবে না।
আমি তো কারো টাকাতে কেনা গোলাম নই, নিজেকে দেইনি বেচে
অন্যের হাতে। কেন আপনারে ভেবে বৃথা হই উচাটন- এই মন
আর কারো মনোমত চলবে না...
আপনি বলতে ঠোঁটের ডগায় আর
তুমি বলা এসে যাবে না; কোনোদিন আর ভুল হবে না।

পলকহারা বিস্ময়!

আমার শিশু কাঁদে শুয়ে বিছানাতে
আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি পলকহারা
মনে আমার ডিগবাজি খায় অজস্র জিজ্ঞাসা
এই মানুষটা কেমন করে ছিল এতকাল
মায়ের পেটে সঙ্গীবিহীন আলোবাতাস ছাড়া??
আমার বধূ স্তন গুঁজে দেয় শিশুর মুখে
আমি তার পেটের দিকে তাকিয়ে থাকি পলকহারা
চোখে আমার দানা বাঁধে সহস্র বিস্ময়
এই পেটেতে পুষছিল সে আস্ত একটা মানুষ
যে যখন তখন করতে পারে হাত-পা নাড়াচাড়া!!

বিপ্রতীপ

খাঁচার পাখি সুখ খুঁজতে পালিয়ে গেলো বনে
মুক্ত বনে খাঁচার কথাই পড়ছে কেনো মনে!!
ঘরের বধূ ঘর ভেঙেছে শান্তি খুঁজতে শান্তি
শান্তি তো নেই, স্বামীর স্মৃতি বাড়িয়ে দিলো ক্লান্তি।
হারিয়ে গেলেই বুঝতে পারি- যা ছিলো তাই ভালো
যা ছিলো না খুঁজতে তাকে গিয়েই তো হারালো।

কবির বিধ্বস্ত কঙ্কাল

নিরন্ধ্র এক গুপ্ত গুহায় পেতেছিলে তাবু, কিন্তু হঠাৎ
নিভন্ত আজ তোমার প্রদীপশিখা
ওড়না আঁকা অন্ধকারে শ্বেত হাড়ের পাহাড়, তোমার কেবল
সাপের ভয়ে আঁতকে ওঠা মুখ
প্রলয়োত্থিত ঝড়ে হৃদয় উঠলো নড়ে, জলতেষ্টায়
শুকনো মরু তোমার কণ্ঠনালী।
কলম হাতে কবি- সামনে লিখা কাগজ, দুঃখগুলো
ছাপাখানায় মলাটবন্দি বই
যা লিখেছো পুড়িয়ে ফেলে উড়িয়ে দাও ছাই, মুখে তোমার
বিকেল বেলার অস্তমিত রোদ
ঝরা শিশির জীবন তোমার যাবে একদা মরে, হঠাৎ হাওয়ায়
যেমন নিভে মাটির প্রদীপখানি।
হোঁচট খেয়ে চলন্তজন ভীষণ চমকে ওঠে, ওগো কবি
অহংকার তো মানায় না আর তোমায়
মধ্যরাতে পোষা কুকুর বিলাপ করে কাঁদে, শুনতে কি পাও
হয়তো কোথাও কেটে গেছে তাল
গামছা এনে পুঁটলি বাঁধো শেষ সম্বল তোমার, ছড়িয়ে থাকা
বুকের পাঁজর বিধ্বস্ত হাড়-গোড়।
কবরখানায় কঙ্কালটি মাটি চেপে রাখা, ভূতের সঙ্গে
শুরু হবে তোমার পাশা খেলা
পাহাড় চূড়ায় জোছনা বিলাস স্থগিত, পৃথিবীটা হবে না আর
পায়ে হেঁটে এফোঁড় ওফোঁড় করা
মাঝদুপুরে গঙ্গাফড়িং বীজতলাতে নাচে, তোমার কলম
সেই কথাটি লিখবে না আর খাতায়।

হঠাৎ দেখা

পালিয়ে যতোই বেড়াও না গো তুমি
হঠাৎ দেখা হবেই
মুখটি যদিও ফেরাও অন্য দিকে
নয়নে বাঁক রবেই।
হঠাৎ দেখায় যতোই থাকো চুপ
ক্ষাণিক কথা কবেই
পালিয়ে যতোই বেড়াও না গো তুমি
হঠাৎ দেখা হবেই।

হুইল চেয়ার

‘হুইল চেয়ারটা না কিনলে কি হতো, মা আর
ক’দিনই বা বাঁচবে...!’
মুখ বাকিয়ে বকবকাচ্ছে মিলি। স্বামীটার নেই
একটুও বিবেচনা বোধ, টাকাগুলো জলে ভাসালো ।
স্ত্রীর চিৎকার শুনে শুনে যন্ত্রনাদগ্ধ মিলন
ধরালো সিগারেট। ধুয়ায় ঘরটা ধুয়াটে। ইচ্ছে হচ্ছিল
সাড়া বাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দিতে।

পাশের ঘরেই বৃদ্ধা, শুয়ে শুয়ে শুনছেন। চোখের কোণের
জল গড়িয়ে পড়লো বালিশে।
বউ-ছেলেতে ঝগড়া, কারণ
হুইল চেয়ারটা। মনে মনে বললেন-
‘আজরাইল কেন আসে না...! পরগাছা হয়ে
বাঁচার চেয়ে মৃত্যু ভালো।’

চার বছরের শিশু চেচামেচি শুনে খেলনা গুলো গুটিয়ে
ভয়ে কাপে। মায়ের দিকে তাকায়, তাকায় বাবার মুখে ।
কাজের মেয়েটা বলে- ‘মানুষকে তার কর্মফল
পৃথিবীতেই পেতে হয় গো খালা, আপনার পুত্রবধু
করবে এমন আচরন যেমনটা করছেন শাশুড়ির সাথে।’
মিলি বিদ্রুপের সুরে শুনায় -‘পুটলা পুটলি বেধে
দেবো বাপের বাড়ি পাঠিয়ে। বুঝবে তখন।’

বৃদ্ধাকে বেশিদিন সইতে হয়নি, মৃত্যু এসে নিয়ে গেছে।
হুইল চেয়ারটা কিছুকাল বারান্দার কোণায়
যত্নে ছিল তোলা। দেখলাম তাদের একমাত্র ছেলেটাকে
কাজের মেয়েটা সেই চেয়ারে চড়িয়ে
 বারান্দা ও ঘরে আনা-নেওয়া করে।
কী এক অজ্ঞাত রোগে ছেলেটা এখন পঙ্গু। ডাক্তার জানিয়েছেন
কোনদিন পারবে না নিজ পায়ে দাড়াতে।
ওদের বারান্দার গ্রিলটাতে চোখ রেখে বলি-‘চাকাওয়ালা চেয়ার
কেনার টাকা গুলো বৃথা গেলেই ভালো হতো।’

জবরদস্তিতে জগতযুদ্ধ

জনৈক বয়োজ্যেষ্ঠের সন্মুখে
নম্রতায় নতজানু, বলেছিলাম- ‘নিজেকে আমার
পাহাড়ের পাশে এক সামান্য উইঢিবির মতো লাগছে।’
আবেগাপ্লুত সে জ্যেষ্ঠজন জবাব দিলেন-
‘সবুজ কুঁড়ির পাশে আমি যেন হলুদ পাতা, ঝরে পরবো
জানি না কখন।’
আরও একদিন, অপ্রীতিকর প্রশ্নের মুখরা জবাব দিতেই
সেই বৃদ্ধ বললো রাগত স্বরে- ‘নিজের ওজন বুঝে
কথা বলতে শেখো, বেটা বেয়াকুব।’
বিনিময়ে হেসেছিলাম যেটুকু ওজন ছিল
বাতাসে বিসর্জন দিয়ে। আর অগোচরে বলেছিলাম-
‘মর বেটা পেচ্ছাব পান করে, ভুষন্ডির কাক।’
শ্রদ্ধা এবং স্নেহ, জবরদস্তিতে মেলে না কোনটা-কোনদিন।
যে তরুণ অগ্রজের পেটে ছুরি ঠেকিয়ে
আদায় করতে চায় স্নেহ, সে পায় তিরস্কার।
যে বদমেজাজী বয়োজ্যেষ্ঠ ডেকে এনে অনুজকে
শাসিয়ে বলে- ‘আমাকে না করলে শ্রদ্ধা, এক থাপ্পরে তোর
সব কটা দাত দেবো ফেলে।’- সে পায় অবজ্ঞার ওয়াক-থু।

শনিবার, ১১ মার্চ, ২০১৭

আকিব শিকদার ( cv )

আকিব শিকদার। জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর থানাধীন তারাপাশা গ্রামে, ০২ ডিসেম্বর ১৯৮৯ সালে। প্রফেসর আলহাজ মোঃ ইয়াকুব আলী শিকদার ও মোছাঃ নূরুন্নাহার বেগম এর জ্যেষ্ঠ সন্তান। স্নাতক পড়েছেন শান্ত-মরিয়ম ইউনিভার্সিটি থেকে ফ্যাশন ডিজাইন বিষয়ে। পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে স্নাতক ও স্নাতোকোত্তর। খন্ডকালীন শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু। বর্তমানে কর্মরত আছেন উত্তরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে।
কবির বিধ্বস্ত কঙ্কাল (২০১৪), দেশদ্রোহীর অগ্নিদগ্ধ মুখ (২০১৫), কৃষ্ণপক্ষে যে দেয় উষ্ণ চুম্বন (২০১৬)
 তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। সাহিত্য চর্চায় উৎসাহ স্বরুপ পেয়েছেন হোসেনপুর সাহিত্য সংসদ প্রদত্ত “উদ্দীপনা সাহিত্য পদক”, “সমধারা সাহিত্য সম্মাননা” । লেখালেখির পাশাপাশি সঙ্গীত ও চিত্রাংকন তার নেশা। 

তামার বিষ

যে টুকু অর্থ পেয়ে মানুষ অমানুষ হয়ে যায়
সে টুকু অর্থবিত্ত দিও না আমায়।
বাংলা ভাষায় একটা প্রবাদ আছে- “তামার বিষ”
সেই তামার বিষে যেন না ধরে আমায়।

এতো টাকা দিয়ে আমি করবো কী, যে টাকা পেলে
নিজের উত্তরাধিকার নাম লিখাতে যায়
অলস ভবঘুরে আর বখাটেদের খাতায়
এতো ধনের মালিক তুমি করো না আমায়।

টাকার অহংকারে বউ ছুটবে হাটে, গয়নাঅলার সাথে
বলবে কথা হেসে
শাড়ি চুড়ি জুতোর দোকান, বিক্রেতারা দাঁড়িয়ে গা ঘেসে
ভাবি ডেকে জুতো বিক্রির ছলে হাত বুলাতে চাইবে পায়-
অর্থের কুপ্রভাব যদি পেয়ে বসে আমায়।

ভাত ছিটালে কাক আসে, টাকা উড়ালে মেয়ে মানুষের
হয় না অভাব
ঈষৎ হেসে তুলে দেবে সবুজ গেলাসে রঙিন সরাব
নগরনটীর দল। কিছু তোষামোদকারী চাটুকার
সামনে দেবেই স্যালুট- পেছনে লাত্থি দেখাবে অবলীলায়।
এতো দৌলত দিয়ে আমি করবো কী, তামার বিষে
যেন না ধরে আমায়।

শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ত্রিদীপ

এক.
বুকের ভেতর প্রজ্জ্বলিত বারুদের ক্ষোভ, আগুন যদি না জ্বলে
তবে নিজেকে পুড়িয়ে যোগাবো আলো।
জীবনকে ঢেলে সাজাবার ডাক দিয়ে যাই-
‘পথ নাই আর পথ নাই 
অন্ধকারে অগ্নিশিখা জ্বেলে দূর করতেই হবে কালো।’

দুই.
দুর্ভিক্ষের আঁচড় লেগেছে যাদের গায়, তারা কি তবে 
নিঃসম্বল হয়েই মরবে সবে....?
ক্ষুধার্তের বোবা কান্না আর বঞ্চনার দীর্ঘশ্বাস শুনেও
ত্রিদীপ হাতে ক্রুদ্ধ দেবতা দেবালয়ে নীরব দাঁড়িয়ে রবে...!!

তিন.
জালিমের দল ছাউনী গেড়েছে আমাদের অঙ্গনে 
প্রদীপের মতো উপকারী আলো বিলাবার দিন আর নয়...
বারুদোত্তাপে জ্বলে উঠবার এসেছে কঠিন সময়।

চোখ তেড়া

মহাত্মা গান্ধী করেছিলেন তেরোবছর বয়সে, শেখ মুজিবকেও
আঠারোতে বিয়ের পিঁড়িতে
বসতে হয়। আর রবিঠাকুর...? সে যুগের সবাই কমবেশি
মুকুল ধরতে না ধরতেই বয়সী বকুল।
দাদারা ভারি কাচের চশমায় পড়তেন সংবাদপত্র। কোথাও
ধর্ষণ নেই, শব্দটা অভিধানে ছিল না নাকি...!
বউকে কুপিয়ে তিনারা এতটাই
ঘেমে যেতেন যে ধর্ষণ করার সুযোগই জুটেনি ঘর্মাক্ত কপালে।

গোলাম সারওয়ার, এ যুগের বিচক্ষণ সম্পাদক, অনিচ্ছা সত্ত্বেও
লাল কালির শিরোনামে ছাপা হয় একটি মেয়ের শ্লীলতাহরণ
তার দৈনিকে প্রায় প্রতিদিন।
উনত্রিশে আমাদের লেখাপড়ায় ইতি, ত্রিশে চাকরির সন্ধানে জুতো ক্ষয়
তেত্রিশে বিবাহ বন্ধন- এই বিশাল সময়ের কাঁনাচে কদাচিৎ ধর্ষণ
অস্বাভাবিক কিছু তো নয়।
ভুলে গেলে চলবে না, সে যুগের তিনাদের মতো
নাভীর নিচের পশম এ যুগেও তেরো চৌদ্দতেই গজায়।

সংবাদপত্র হাতে নিয়ে চায়ের কাপে
ঠোঁট ডুবিয়ে সহকর্মীর দিকে চোখ তেড়া করেন
সরকারি কাচারির দ্বিতীয় শ্রেণির চাকুরে নিরঞ্জন-
“বুঝলেন দিদি আমি কি বলি, বাল্যবিবাহের মূল উৎপাটন
করতে গেলে বেড়ে যেতেই পারে ধর্ষণ।”

সোমবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৭

খোকার জন্য জব্দ

আমার খোকা তোমার কোলে আসবে বলে যখন
পেটের ভেতর এদিক-ওদিক হাত-পা ছুড়ে মারে
আমার তখন সারা শরীর শিকলমুড়ে বাঁধা
বন্দী আছি স্বৈরাচারীর অন্ধ কারাগারে।

দেশটা এখন জব্দ ভীষণ শোষক শ্রেণীর হাতে
খোকার জন্য এ দেশটাকে মুক্ত করতে হবেই
অরাজকতার দম্ভ ভাঙতে মৃত্যু যদিও আসে
জন্মদাতা হওয়া আমার সফল হবে তবেই।

তোমার মাথার সিঁথির সিঁদুর হয়তো যাবে মুছে
আমার চিতার অগ্নিশিখা জ্বলবে খাঁ খাঁ স্বরে
হয়তো হঠাৎ আমার খোকা শিখবে হামাগুড়ি
দন্তবিহীন তার হাসিতে শিউলি পড়বে ঝরে।

যেই কথাটি বলতে আমার কণ্ঠরুদ্ধ আজ
বজ্রকণ্ঠে আমার খোকা সেই কথাটি কবেই
স্বাধীনতার মুকুট আনতে শিকলবন্দী আমি
আমার খোকা স্বাধীন হতে অস্ত্র হাতে লবেই।

সোমবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৭

পা


আমি তাকিয়ে ছিলাম ওর দিকে
কাঁচ পেরুনো দৃষ্টি নিয়ে-ওর দিকে
চৌরাস্তার মোড়ে যেখানে প্রচন্ড যান্ত্রিক ভিড়।

জানালার শার্শিতে তখন একটা চড়ুই ডাকছিল
একা একা নাচছিল আর ডাকছিল
কারও প্রতীক্ষা বুঝি।
হঠাৎ আকাশচেড়া শব্দ-
নক্ষত্রকাঁপানো বিকট শব্দ
চড়ুই পাখিটা আচমকা কেঁপে উঠলো 
পাখা ঝাপটে চিৎপটাং কেঁপে উঠলো-
তারপর ভয়ার্ত উড়ে গেল ঐ দিকে
উঁচু দালানের আড়ালে, ঐ দিকে। 

আমি দেখলাম চৌরাস্তার ভিড়ে-
অজস্র মানুষের নিদারুণ ভিড়ে
দাউ দাউ জ্বলছে আগুন
আর বনপোড়া হরিণের মতো ছুটছে মানুষ 
শহরের সমগ্র মানুষ-
যেন সমুদ্র ঊর্মি অসম্ভব বেগে আন্দোলিত।

প্রচণ্ড সে বোমার বিস্ফোরণে 
ওর একটা পা ছিটকে এল-
উরু বরাবর থেতলে ছিটকে এল
দোতলার জানালার কার্ণিশে
আমার ঝুল বারান্দার জানালার কার্ণিশে।

ওহ, কী বীভৎস
টপটপে তাজা রক্ত কী বীভৎস-
জানালার কাঁচ বেয়ে ঝরছিল 
আমি আর কিছু বলতে পারি না। 

মুক্তির সুর বাজাবো সংঘাতে

সত্যের টুটি ধরেছে চেপে মিথ্যা আজ-
করো কী কাজ...! 
কাঁদে মজলুম মুক্তির লাগি। 
যারা জুলুমের দায়ে দায়ভাগী 
আজকে তাদের ঘৃণার কামানে দাগী। 

কানে দিয়ে হাত চাপা 
কতো কাল রবি ওরে- না শোনার ভান ধরে 
বৃথা অনুনয়ে হবে ব্যর্থ সময় মাপা। 

কুয়াশা কাটবে আজকে অথবা কাল 
কুৎসার জঞ্জাল 
ছিড়বো একদা নবীন প্রাতে। 
দিতে হয় প্রাণ দেবো শত্রুর হাতে 
মুক্তির সুর বাজাবো সংঘাতে। 

বুধবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১৭

আকিব শিকদার

আকিব শিকদার
কবি ও শিক্ষক
৮৪২/২ ফিসারি লিংক রোড
হারুয়া, কিশোরগঞ্জ।
Email : akibshikder333@gmail.com
Mobile : ০১৯১৯৮৪৮৮৮৮
রচিত কাব্য গ্রন্থ ঃ কবির বিধ্বস্ত কঙ্কাল (২০১৪), দেশদ্রোহীর অগ্নিদগ্ধ মুখ (২০১৫) 
কৃষ্ণপক্ষে যে দেয় উষ্ণ চুম্বন (২০১৬)।

ভিনদেশে বিপর্যস্ত

মা আমাকে তার মাতৃসুলভ আচরণে
স্নেহের হাতে তুলে খাইয়ে দিতে চাইতো, আমি দেইনি সম্মতি কখনো
তার বুড়ো আঙুলের নখটা কেমন মড়া ঝিনুকের
ফ্যাকসা খোলসের মতো ছিল বলে।
শৈশবে স্কুলে পৌঁছবার রাজপথে
যেদিন প্রথম দেখেছিলাম শিয়ালের থেতলানো দেহ
টানা তিনরাত ঘুমোতে পারিনি দুঃস্বপ্ন দেখার ভয়ে, পারিনি করতে 
আহার স্বাভাবিক। চোখের সামনে শুধু উঠতো ভেসে 
বিচ্ছিন্ন মস্তক একটা মরা শিয়াল যার উসকোখুসকো চামড়ায়
জমে আছে রক্তের স্তূপ আর তকতকে নীল মাছি।

খুব বেশি খুতখুতে
স্বভাব ছিল আমার। বাবা একবার আমার গামছা দিয়ে 
মুছে ছিলেন তার শস্যক্ষেত থেকে ফিরে আসা ঘর্মাক্ত পিঠ,
সেই অপরাধে তার চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার
করে দিয়েছিলাম মূর্খের অপবাদ দিয়ে। এক বিছানায় ঘুমোতে গিয়ে 
আমার যে ছোটভাইটা গায়ের উপর তুলে দিতো পা
আমি এক চড়ে তার কান থেকে রক্ত ঝরিয়ে বুঝিয়েছিলাম 
ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে যাওয়ার খেসারত। 

এখন আমার ঘুম আসে না, ঘুম আসে না রাতে
ছাড়পোকা আর মশাদের উৎপাতে। উৎকট গন্ধে
বন্ধ দম, শৌচাগারের পাশে বিছানায় নেই গা ঢাকা দেবার মতো 
টুকরো কাপড়। শীতে জুবুথুবু হয়ে যখন কুকড়ে যাই
তোকে বড়ো মনে পড়ে, তোকে বড়ো মনে পড়ে ভাইরে। ঘুমঘোরে একটি পা
গায়ের উপরে তুলে দিবি না আমায়
একটু আরাম উত্তাপ? বল, তুই করবি না
ক্ষমা আমায়...?

ওরা যখন আমাকে নিয়ে এসেছিল ভিনদেশে
বলেছিল কাজ দেবে পাঁচতারা হোটেলে, নিদেনপক্ষে মুদির দোকান তো
জুটবেই কপালে। সূর্য ওঠার আগে
শাবল ক্ষন্তা আঁকশি হাতে লেগে যাই কাজে, নগরের নর্দমা
শোধন এখন আমার কাজ। 
যে হাতে ধরিনি গরুর দড়ি গোবর চনার গন্ধ লাগবে বলে
সে হাত ধরে পঁচা ইদুরের লেজ, পলিথিনে মোড়া 
মাছি ভনভন করা মাছের পুরনো আঁশ। পরিত্যক্ত আবর্জনা 
তুলে নিই পিঠের ঝুলিতে। বড়ো অসহায়, বড়ো অসহায় লাগে মা,
মনে হয় মরে যাই; না গেলে কাজে নিতান্ত বুভূক্ষু
কাটে দিন, পানিটাও এইদেশে কিনে খেতে হয়, টাকা ছাড়া জোটে না
কান চুলকানোর কাঠিটি পর্যন্ত। 

একবার, শুধু একবার, মা তোমার গোবর গুলে গৈঠা বানানো হাতে
একমুঠো ভাত খাইয়ে দিয়ে যাও। 
বাবা, ও বাবা, আমার গায়ের সবচেয়ে সুন্দর যে জামাটি
তাতে মোছো তোমার ভাত খেয়ে না ধোয়া হাত। তোমার সফেদ দাড়ির ভাজে
তরকারির যে ঝোল লেগে থাকে
সেই ময়লাটি জিহ্বায় চেটে তুলে নিতে বড়ো ইচ্ছা জাগে আমার। 

আষাঢ়ের বৃষ্টিধারা

দেখি জানালার পাশে বসে তিনতলা ঘরে
নিচে রাস্তায় আষাঢ়ের বৃষ্টিধারা ঝরঝর ঝরে
পথ প্রায় জনহীন, দু-একজন ছাতা হাতে যায় হেঁটে হেঁটে
চৌচাকা গাড়ি কাচের জানালা আঁটা, ছুটছে দ্রুত পানি কেটে কেটে
একটা কুকুর বেওয়ারিশÑ বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে সাওয়ার
গাছের পাতায় জল, বেড়ে গেছে গতি দুষ্ট হাওয়ার।

একটানা ভিজে ভিজে কালো পিচপথ হলো আরো কালো
আকাশের ধূসর মেঘ ক্রমে ক্রমে হয়েছে ঘোরালো
একজোড়া ছেলেমেয়ে কাছাকাছি স্কুল শেষে ফিরছিল বাড়ি
মনে ওদের লেগেছে রং বুঝিÑ আভাস পাই যে তারই
মেয়েটার নীল ফ্রক সাদা পায়জামা, হাতে হলুদ ছাতা
কাঁধে লাল ব্যাগ বইয়ে বইয়ে পূর্ণÑ চুলে বাঁধা ফিতা
ছেলেটির সাদা শার্ট কালো প্যান্ট পায়ে সাদা পাম-সু
কালো ব্যাগে বই কাঁধে ফিটফাট চেহারা, ভাবেসাবে ‘হামসু’।

হঠাৎ দমকা হাওয়ায় উড়ে গেল ছাতাটা মেয়েটার হাত হতে
পড়লো ছিটকে গিয়ে হাঁটুজল বেঁধে যাওয়া গলির পথে
ছুটে গিয়ে ছেলে আনলো কুড়িয়ে ছাতা, তুলে দিলো মেয়েটার হাতে
সযতনে রাখলো ভাঁজ করে লাল ব্যাগে বই পেনসিলের সাথে
বেপরোয়া বৃষ্টিতে হাঁটলো তারা হাতে হাত ধরে
চলাচলে ছন্দ, নৃত্যের ভঙ্গিতে হাঁটছে বুঝি গান করে করে
ভেজা কাক ওড়ে আকাশে, ওড়ে ঘন ছাই মেঘ আষাঢ়ি
পাশাপাশি ছেলে আর মেয়ে, ঢাকলো ওদের ধূসর বৃষ্টির মশারি।

কদম

ঋতুটি শরৎ এখন পঞ্জিকার পাতায়।
বর্ষার আমেজ কাটেনি বুঝি, সারাটি আকাশ 
কালো করে নামে বৃষ্টি।
একটানা ভিজে শালবন, মহুয়ার কিশলয়। সতেজ হয়--
লতানো পুঁইয়ের ডগা। 

এ বর্ষণ দেখার সৌভাগ্য আমার নেই। দূর পরবাসে 
বসে আমি ভাবি--আহ, কি সহজেই ভুলে গেলাম, ভুলে গেলাম
প্রিয় ফুল কদমের কথা... ! 
পড়ার টেবিলে দুটো কদম, আষাঢ় শ্রাবণে তরতাজা দুটো কদম
জিইয়ে রেখেছি কতো--
কাচের বোতলে। ভেজা বাতাসে কদমের হালকা সুবাস।
তিনটে বছর, মাত্র তিনটে বছর 
ভুলিয়ে দিলো চব্বিশ বছরের বর্ষার স্মৃতি, যেন চব্বিশ বছর
পরাজিত তিন বছরের পাল্লায়।

পরিজন ফোন করে খবর নিতে--'কি পাঠাবো বল...?
কাঠালের বিচি ভাজা, চিনে বাদাম, ঝুনা নারকেল
নাকি আমের আচার... ?'--ওদের তালিকায় 
আমার পছন্দ অনুপস্থিত।

সাহেবদের বিলেতি ফুলের ভিড়ে 
ঠাঁই নেই কদমের--
যেমন আছে কাদা মাটির সোঁদাগন্ধ ভরা বাংলায়।
ক্যালেন্ডারের পাতায় দেখি 
ফুটফুটে কদমের শ্বেত রেণু বিনিময়, আর অন্তরে অনুভবে
রূপ-রস-গন্ধ।

মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৭

বালক বালিকা

আসমানী শাড়ি নিখুঁত পড়ে আছে আলনায়
পড়ে আছে রেশমি চুড়ি, সাদা কাঁচুলী, শিউলির মালা, বেলিফুল
অবহেলায় কাচ-পোকা টিপ, হীড়েকুচি নোলক, ঝিনুক কানের দুল।
       বালিকা সাজঘরে আয়নায়
                প্রতীক্ষা গুনে কী এক অস্থিরতায়
বালক এলেই সাজবে মোহিনী সাজ; রুপার নূপুর দেবে পায়-
বালকের আগমন যেন তার একমাত্র উৎসব।
এসেছিল বালক, কড়াও নেড়েছিল খুব
‘কেন এতো দেরি হলো’- বড়ো বেশি অভিমানে বালিকা খোলেনি দ্বার
বালকের হাতে ছিল কৃষ্ণচূড়া, আলতা আর সুগন্ধি আতরসম্ভার
         বালিকার কপালে কপাল-
ছুঁয়ে সৃখবৃষ্টিতে ভেজার কথা আজ, আস্ত বিকাল।
     তবু দ্বার খোলেনি বালিকা
শোনেনি বালকের হৃদয়জ আহাজারি। অর্ঘ হাতে ভীষণ একা
দরজায় ক্রমাগত ঠকঠক
চিরপরিচিত করিডোরে অনঢ় দাড়িয়ে রয় নাছোড়বান্দা বালক-
          যেন তার একমাত্র পূজনীয়া দেবীটি বালিকা।