বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০১৭

কোনোদিন আর ভুল হবে না

কোনোদিন আর ভুল হবে না, আপনি বলতে ঠোঁটের ডগায় আর
তুমি বলা এসে যাবে না।
এই কান ধরে বলছি গো, মাথা ছুঁয়ে বলছি- আপনার পথের পানে
আর চেয়ে থাকা হবে না।
আর কোনোদিন আমি তাকাবো না আড়চোখে, আপনি যতই পরে আসুন
নতুন শাড়ি। কপালের টিপ যদি ভুল করে অস্থানে হয়ে যায়
ইশারায় আর আমি দেখাবো না...
আপনি বলতে ঠোঁটের ডগায় আর
তুমি বলা এসে যাবে না; কোনোদিন আর ভুল হবে না।
আপনি যদি আমাকে রেখেই চলে যান চুপিচুপি, চলে যান
কবিতা পাঠের আসর ছেড়ে। এই মাটি খেয়ে বলছি গো, কিড়া কেটে বলছি-
আর রাগ করে আমি মুখ ফোলাব না...
আপনি বলতে ঠোঁটের ডগায় আর
তুমি বলা এসে যাবে না; কোনোদিন আর ভুল হবে না।
আমি তো কারো টাকাতে কেনা গোলাম নই, নিজেকে দেইনি বেচে
অন্যের হাতে। কেন আপনারে ভেবে বৃথা হই উচাটন- এই মন
আর কারো মনোমত চলবে না...
আপনি বলতে ঠোঁটের ডগায় আর
তুমি বলা এসে যাবে না; কোনোদিন আর ভুল হবে না।

পলকহারা বিস্ময়!

আমার শিশু কাঁদে শুয়ে বিছানাতে
আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি পলকহারা
মনে আমার ডিগবাজি খায় অজস্র জিজ্ঞাসা
এই মানুষটা কেমন করে ছিল এতকাল
মায়ের পেটে সঙ্গীবিহীন আলোবাতাস ছাড়া??
আমার বধূ স্তন গুঁজে দেয় শিশুর মুখে
আমি তার পেটের দিকে তাকিয়ে থাকি পলকহারা
চোখে আমার দানা বাঁধে সহস্র বিস্ময়
এই পেটেতে পুষছিল সে আস্ত একটা মানুষ
যে যখন তখন করতে পারে হাত-পা নাড়াচাড়া!!

বিপ্রতীপ

খাঁচার পাখি সুখ খুঁজতে পালিয়ে গেলো বনে
মুক্ত বনে খাঁচার কথাই পড়ছে কেনো মনে!!
ঘরের বধূ ঘর ভেঙেছে শান্তি খুঁজতে শান্তি
শান্তি তো নেই, স্বামীর স্মৃতি বাড়িয়ে দিলো ক্লান্তি।
হারিয়ে গেলেই বুঝতে পারি- যা ছিলো তাই ভালো
যা ছিলো না খুঁজতে তাকে গিয়েই তো হারালো।

কবির বিধ্বস্ত কঙ্কাল

নিরন্ধ্র এক গুপ্ত গুহায় পেতেছিলে তাবু, কিন্তু হঠাৎ
নিভন্ত আজ তোমার প্রদীপশিখা
ওড়না আঁকা অন্ধকারে শ্বেত হাড়ের পাহাড়, তোমার কেবল
সাপের ভয়ে আঁতকে ওঠা মুখ
প্রলয়োত্থিত ঝড়ে হৃদয় উঠলো নড়ে, জলতেষ্টায়
শুকনো মরু তোমার কণ্ঠনালী।
কলম হাতে কবি- সামনে লিখা কাগজ, দুঃখগুলো
ছাপাখানায় মলাটবন্দি বই
যা লিখেছো পুড়িয়ে ফেলে উড়িয়ে দাও ছাই, মুখে তোমার
বিকেল বেলার অস্তমিত রোদ
ঝরা শিশির জীবন তোমার যাবে একদা মরে, হঠাৎ হাওয়ায়
যেমন নিভে মাটির প্রদীপখানি।
হোঁচট খেয়ে চলন্তজন ভীষণ চমকে ওঠে, ওগো কবি
অহংকার তো মানায় না আর তোমায়
মধ্যরাতে পোষা কুকুর বিলাপ করে কাঁদে, শুনতে কি পাও
হয়তো কোথাও কেটে গেছে তাল
গামছা এনে পুঁটলি বাঁধো শেষ সম্বল তোমার, ছড়িয়ে থাকা
বুকের পাঁজর বিধ্বস্ত হাড়-গোড়।
কবরখানায় কঙ্কালটি মাটি চেপে রাখা, ভূতের সঙ্গে
শুরু হবে তোমার পাশা খেলা
পাহাড় চূড়ায় জোছনা বিলাস স্থগিত, পৃথিবীটা হবে না আর
পায়ে হেঁটে এফোঁড় ওফোঁড় করা
মাঝদুপুরে গঙ্গাফড়িং বীজতলাতে নাচে, তোমার কলম
সেই কথাটি লিখবে না আর খাতায়।

হঠাৎ দেখা

পালিয়ে যতোই বেড়াও না গো তুমি
হঠাৎ দেখা হবেই
মুখটি যদিও ফেরাও অন্য দিকে
নয়নে বাঁক রবেই।
হঠাৎ দেখায় যতোই থাকো চুপ
ক্ষাণিক কথা কবেই
পালিয়ে যতোই বেড়াও না গো তুমি
হঠাৎ দেখা হবেই।

হুইল চেয়ার

‘হুইল চেয়ারটা না কিনলে কি হতো, মা আর
ক’দিনই বা বাঁচবে...!’
মুখ বাকিয়ে বকবকাচ্ছে মিলি। স্বামীটার নেই
একটুও বিবেচনা বোধ, টাকাগুলো জলে ভাসালো ।
স্ত্রীর চিৎকার শুনে শুনে যন্ত্রনাদগ্ধ মিলন
ধরালো সিগারেট। ধুয়ায় ঘরটা ধুয়াটে। ইচ্ছে হচ্ছিল
সাড়া বাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দিতে।

পাশের ঘরেই বৃদ্ধা, শুয়ে শুয়ে শুনছেন। চোখের কোণের
জল গড়িয়ে পড়লো বালিশে।
বউ-ছেলেতে ঝগড়া, কারণ
হুইল চেয়ারটা। মনে মনে বললেন-
‘আজরাইল কেন আসে না...! পরগাছা হয়ে
বাঁচার চেয়ে মৃত্যু ভালো।’

চার বছরের শিশু চেচামেচি শুনে খেলনা গুলো গুটিয়ে
ভয়ে কাপে। মায়ের দিকে তাকায়, তাকায় বাবার মুখে ।
কাজের মেয়েটা বলে- ‘মানুষকে তার কর্মফল
পৃথিবীতেই পেতে হয় গো খালা, আপনার পুত্রবধু
করবে এমন আচরন যেমনটা করছেন শাশুড়ির সাথে।’
মিলি বিদ্রুপের সুরে শুনায় -‘পুটলা পুটলি বেধে
দেবো বাপের বাড়ি পাঠিয়ে। বুঝবে তখন।’

বৃদ্ধাকে বেশিদিন সইতে হয়নি, মৃত্যু এসে নিয়ে গেছে।
হুইল চেয়ারটা কিছুকাল বারান্দার কোণায়
যত্নে ছিল তোলা। দেখলাম তাদের একমাত্র ছেলেটাকে
কাজের মেয়েটা সেই চেয়ারে চড়িয়ে
 বারান্দা ও ঘরে আনা-নেওয়া করে।
কী এক অজ্ঞাত রোগে ছেলেটা এখন পঙ্গু। ডাক্তার জানিয়েছেন
কোনদিন পারবে না নিজ পায়ে দাড়াতে।
ওদের বারান্দার গ্রিলটাতে চোখ রেখে বলি-‘চাকাওয়ালা চেয়ার
কেনার টাকা গুলো বৃথা গেলেই ভালো হতো।’

জবরদস্তিতে জগতযুদ্ধ

জনৈক বয়োজ্যেষ্ঠের সন্মুখে
নম্রতায় নতজানু, বলেছিলাম- ‘নিজেকে আমার
পাহাড়ের পাশে এক সামান্য উইঢিবির মতো লাগছে।’
আবেগাপ্লুত সে জ্যেষ্ঠজন জবাব দিলেন-
‘সবুজ কুঁড়ির পাশে আমি যেন হলুদ পাতা, ঝরে পরবো
জানি না কখন।’
আরও একদিন, অপ্রীতিকর প্রশ্নের মুখরা জবাব দিতেই
সেই বৃদ্ধ বললো রাগত স্বরে- ‘নিজের ওজন বুঝে
কথা বলতে শেখো, বেটা বেয়াকুব।’
বিনিময়ে হেসেছিলাম যেটুকু ওজন ছিল
বাতাসে বিসর্জন দিয়ে। আর অগোচরে বলেছিলাম-
‘মর বেটা পেচ্ছাব পান করে, ভুষন্ডির কাক।’
শ্রদ্ধা এবং স্নেহ, জবরদস্তিতে মেলে না কোনটা-কোনদিন।
যে তরুণ অগ্রজের পেটে ছুরি ঠেকিয়ে
আদায় করতে চায় স্নেহ, সে পায় তিরস্কার।
যে বদমেজাজী বয়োজ্যেষ্ঠ ডেকে এনে অনুজকে
শাসিয়ে বলে- ‘আমাকে না করলে শ্রদ্ধা, এক থাপ্পরে তোর
সব কটা দাত দেবো ফেলে।’- সে পায় অবজ্ঞার ওয়াক-থু।

শনিবার, ১১ মার্চ, ২০১৭

আকিব শিকদার ( cv )

আকিব শিকদার। জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর থানাধীন তারাপাশা গ্রামে, ০২ ডিসেম্বর ১৯৮৯ সালে। প্রফেসর আলহাজ মোঃ ইয়াকুব আলী শিকদার ও মোছাঃ নূরুন্নাহার বেগম এর জ্যেষ্ঠ সন্তান। স্নাতক পড়েছেন শান্ত-মরিয়ম ইউনিভার্সিটি থেকে ফ্যাশন ডিজাইন বিষয়ে। পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে স্নাতক ও স্নাতোকোত্তর। খন্ডকালীন শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু। বর্তমানে কর্মরত আছেন উত্তরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে।
কবির বিধ্বস্ত কঙ্কাল (২০১৪), দেশদ্রোহীর অগ্নিদগ্ধ মুখ (২০১৫), কৃষ্ণপক্ষে যে দেয় উষ্ণ চুম্বন (২০১৬)
 তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। সাহিত্য চর্চায় উৎসাহ স্বরুপ পেয়েছেন হোসেনপুর সাহিত্য সংসদ প্রদত্ত “উদ্দীপনা সাহিত্য পদক”, “সমধারা সাহিত্য সম্মাননা” । লেখালেখির পাশাপাশি সঙ্গীত ও চিত্রাংকন তার নেশা। 

তামার বিষ

যে টুকু অর্থ পেয়ে মানুষ অমানুষ হয়ে যায়
সে টুকু অর্থবিত্ত দিও না আমায়।
বাংলা ভাষায় একটা প্রবাদ আছে- “তামার বিষ”
সেই তামার বিষে যেন না ধরে আমায়।

এতো টাকা দিয়ে আমি করবো কী, যে টাকা পেলে
নিজের উত্তরাধিকার নাম লিখাতে যায়
অলস ভবঘুরে আর বখাটেদের খাতায়
এতো ধনের মালিক তুমি করো না আমায়।

টাকার অহংকারে বউ ছুটবে হাটে, গয়নাঅলার সাথে
বলবে কথা হেসে
শাড়ি চুড়ি জুতোর দোকান, বিক্রেতারা দাঁড়িয়ে গা ঘেসে
ভাবি ডেকে জুতো বিক্রির ছলে হাত বুলাতে চাইবে পায়-
অর্থের কুপ্রভাব যদি পেয়ে বসে আমায়।

ভাত ছিটালে কাক আসে, টাকা উড়ালে মেয়ে মানুষের
হয় না অভাব
ঈষৎ হেসে তুলে দেবে সবুজ গেলাসে রঙিন সরাব
নগরনটীর দল। কিছু তোষামোদকারী চাটুকার
সামনে দেবেই স্যালুট- পেছনে লাত্থি দেখাবে অবলীলায়।
এতো দৌলত দিয়ে আমি করবো কী, তামার বিষে
যেন না ধরে আমায়।