বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০১৭

হুইল চেয়ার

‘হুইল চেয়ারটা না কিনলে কি হতো, মা আর
ক’দিনই বা বাঁচবে...!’
মুখ বাকিয়ে বকবকাচ্ছে মিলি। স্বামীটার নেই
একটুও বিবেচনা বোধ, টাকাগুলো জলে ভাসালো ।
স্ত্রীর চিৎকার শুনে শুনে যন্ত্রনাদগ্ধ মিলন
ধরালো সিগারেট। ধুয়ায় ঘরটা ধুয়াটে। ইচ্ছে হচ্ছিল
সাড়া বাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দিতে।

পাশের ঘরেই বৃদ্ধা, শুয়ে শুয়ে শুনছেন। চোখের কোণের
জল গড়িয়ে পড়লো বালিশে।
বউ-ছেলেতে ঝগড়া, কারণ
হুইল চেয়ারটা। মনে মনে বললেন-
‘আজরাইল কেন আসে না...! পরগাছা হয়ে
বাঁচার চেয়ে মৃত্যু ভালো।’

চার বছরের শিশু চেচামেচি শুনে খেলনা গুলো গুটিয়ে
ভয়ে কাপে। মায়ের দিকে তাকায়, তাকায় বাবার মুখে ।
কাজের মেয়েটা বলে- ‘মানুষকে তার কর্মফল
পৃথিবীতেই পেতে হয় গো খালা, আপনার পুত্রবধু
করবে এমন আচরন যেমনটা করছেন শাশুড়ির সাথে।’
মিলি বিদ্রুপের সুরে শুনায় -‘পুটলা পুটলি বেধে
দেবো বাপের বাড়ি পাঠিয়ে। বুঝবে তখন।’

বৃদ্ধাকে বেশিদিন সইতে হয়নি, মৃত্যু এসে নিয়ে গেছে।
হুইল চেয়ারটা কিছুকাল বারান্দার কোণায়
যত্নে ছিল তোলা। দেখলাম তাদের একমাত্র ছেলেটাকে
কাজের মেয়েটা সেই চেয়ারে চড়িয়ে
 বারান্দা ও ঘরে আনা-নেওয়া করে।
কী এক অজ্ঞাত রোগে ছেলেটা এখন পঙ্গু। ডাক্তার জানিয়েছেন
কোনদিন পারবে না নিজ পায়ে দাড়াতে।
ওদের বারান্দার গ্রিলটাতে চোখ রেখে বলি-‘চাকাওয়ালা চেয়ার
কেনার টাকা গুলো বৃথা গেলেই ভালো হতো।’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন