বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৭

অফিসে যাবার বেলায় আমি আর বাবা

হাতে পায়ে লোশন মালিশকালে পড়লো মনে
বাবা তো এ বস্তু মাখেনি কখনো গায়ে...!
নাকে মুখে ছাকা ছাকা সরিষার তেল মেখে বলতেন-
‘খাঁটি জিনিস, বড়ো উপকারী, চোখে ধরলে আরও ভালো’
সে যুগের মানুষ ছিলেন কি না
এ যুগের কি বুঝবেন...! অথচ লোশন
তখনো দোকানে পাওয়া যেতো ঠিকই।

জেল মাখা চুলগুলো পরিপাটি আঁচড়াতে গিয়ে দেখি
আগেকার আয়নাটা ছিলো না তো এতো বড়
আর এতো মসৃণ...! ছিলো একফালি ভাঙা কাঁচ, তাতেও আবার
প্রতিবিম্ব বিকৃত। বাবার মাথায়
শুষ্ক চুল, চিরুণীর দাঁত কটা বিলীন, নতুন যোগানোর
নেই আয়োজন- টানাপোড়নে এমনি সাদামাটা বেঁচে থাকা।

রিক্সাতে উঠে যাই অনায়াসে, শুধাই না ভাড়া
বাবা ঠিকই চড়তেন দাম দড় কষে, যেন যাত্রা শেষে
ধূর্ত চালক না পারে খসাতে
একটি টাকাও বেশি। কিংবা রাজ্যের পথ
পায়ে হেঁটেই দিতেন পাড়ি, তবু
পকেটের টাকা পকেটেই থেকে যাক- এই যেন পণ।

সেন্টের ঘ্রাণমাখা জামা, সিগারেট ফুকে ফুকে চলি
পথের ভিখারি যেই চায় দুটো পয়সা হাত বাড়িয়ে
অমনি দিলাম রাম ধমক, অকথ্য গালাজ তো আছেই।
বাবা তাকে ফেরাতেন খালি হাতে
তবু ধমকটা দিতেন না; আর তার কাছে সিগারেট ফুকা মানে
অকাতরে অর্থ ওড়ানো। অল্প আয়ের লোক-
বাউন্ডুলে তোড়জোড় তাকে কি মানায়...?

অফিসে ঢুকেই দেখি বেশুমার মক্কেল প্রতীক্ষা গুণে,
চেয়ার টেনে বসতেই টেবিলের আবডালে চলে আসে টাকা।
ঘুষ বললে মন্দ শোনায়, বাঁ হাতের কারসাজি
ডাকি আমি এ-কে।
এমন সুপটুতা ছিলো দুষ্কর বাবার পক্ষে
অতি ভীতু ব্যক্তির দ্বারা হবে কেন
এ তো নির্ভীক সওদা...!
হয়তো তিনি বলতেন- ‘এ কাজ করার আগে
মরণ দিও প্রভু, তবু ঘুষ নয়।’
বাবাটার লাগি বড়ো মায়া হয়, জীবনটা তার
কোনদিন উপভোগ করা হলো না। সে যুগের মানুষ ছিলেন কি না
এ যুগের কি বুঝবেন...!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন