রবিবার, ২৩ জুন, ২০১৯

সাক্ষী

    
উসকু খুসকু চুল, গায়ে ছেঁড়া জামা, মুখ ভরা
খুচা দাড়িÑ ব্রীজের উপর একটি পাগল। বুকে তার
পিতলের থালা ডান হাতে চেপে রাখা, যেন যক্ষের ধন।
থালায় খায়নি সে কোন দিন, খায়
টুকরো পলিথিনে।
থালায় নেয়নি সে ভিক্ষা কখনো; মানুষের দান
সে নেয় হাতের আঁজলা পেতে। থালাটি শুধু
ঘুমাবার বেলা থাকে তার সিথানে বিছানো।


ঝড় কবলিত বটবৃক্ষের মতো বিধ্বস্ত চেহারায়
একজন আধ-বয়সী নারী মাঝে মাঝে পাগলকে দেখতে এসে
ভেজা চোখ মুছে যায়। তখন প্রতিবার তার হাতের
একটি রুপার চুড়ি পাহাড়ি মেয়ের পায়ে পায়েলের মতো
সূর্যালোকে চিকচিক করে ওঠে।


পথের কুকুর সাক্ষী, সাক্ষী দিনের সূর্য, পঁচিশ বছর আগে
এই সেতুর উপরই স্কুলগামী কিশোরীর হাতে একটি কিশোর
পরিয়ে দিয়েছিল রুপার চুড়ি
কোন এক সোনাঝরা গোধূলীতে। বালিকা অকস্মাৎ
বই বহনের ব্যাগ খুলে একটি পিতলের থালা
বালকের হাতে দিয়েছিল তুলে; পঁচিশ বছর আগেÑ
সাক্ষী ব্রিজের পারে তালগাছ, সাক্ষী দখিনা বাতাস।

পরিণতি

মা। যখন সন্তানের মুখে স্তন গুজার কথা, দোলনায়
দোল তুলে ঘুমপাড়ানিয়া গান শোনাবার কথা
দাসির হাতে দুধের বোতল দিয়ে মজেছো টিভি নাটকে, সিনেমায়।
বাবা। যখন সন্তান নিয়ে দৌড়-ঝাপ, লুকোচুরি, ফুটবল
এটা ওটা খেলাচ্ছলে কোলে তুলে চুমু বিলাবার কথা
পোষা কুকুরের শিকল ধরে ঘুরছো পার্কে-ময়দানে, ভালোবেসে
পিঠের লোমে বুলাচ্ছো হাত।
শিশুটা কাঁদছে একাকিত্বের যন্ত্রণায়, জানালার গ্রীলে
ঠুকছে কপাল। অথচ তোমরা বন্ধুবান্ধব আর
প্রিয় খুনসুটিতে কাটাচ্ছো দিন-রাত, ছেলেকে রেখে অবহেলায়।


তোমাদের সন্তান ঘরের দেয়ালে একটি দুটি অক্ষর
নচেৎ ফুল-পাতা-চিত্র এঁকে দাড়িয়েছে কুড়াতে প্রশংসা।
ভ্রুয়ের পাশে যন্ত্রণা এনে ভেবেছো- ধুর ছাই...
কেন এই জঞ্জাল পোষা! ঢের ভালো
নিঃসন্তান জীবনটা উপভোগ। অথবা তাকে শিশু-সেবাকেন্দ্রে
দেবে নির্বাসন আগামী মাসেই।


হুম... তোমাদেরকেই বলছি... শোন হে জননী এবং জনক
তোমাদের দুর্দিনে, ধরো... প্রবীণ বয়সে
হাতের লাঠি অথবা চশমা যদি হাত ফসকে নাক উপচে
পড়ে যায়, আসবে না কেউ ছুটে পুনরায় তুলে দিতে।
ছেলেটা পাশের ঘরে বউ নিয়ে মাতবে
হাসি-তামাসায়! তোমরা একা অন্ধকারে শক্তিহীন
সন্ধ্যাবাতি জ্বালাবার। পিঞ্জিরায় কাঠবিড়ালী, তাকে সময় সময়
খাবার দিতে ভুলবে না পুত্রবধু।
অথচ শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীকে অষুধ সেবনে
প্রায়ই হবে ভুল। আর যদি বড়ো বেশি বোঝা হয়ে ওঠো
তোমাদের আশ্রয় হবে বৃদ্ধাশ্রম, শুধু বৃদ্ধাশ্রম।