বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০১৭

অপারগ সাংবাদিকের ক্যামেরা

ক্যামেরা ঘুরিয়ে নিন-
অর্থাৎ এক কথায় ছবি তুলতে করছি নিষেধ
আপনাকে, সাংবাদিক সাহেব। গলায় ঝোলানো এই ছবি তোলার যন্ত্রটা
এর উপর আপনি আস্থা রাখুন কী করে এতো, কী আছে এর ততো
শক্তি, অথবা কারিশমা
প্রকাশ অযোগ্যকে ফুটিয়ে তোলার!
বড়জোর আমার হাতের
তরতাজা রাইফেল, প্রাণঘাতি ঝকমকে কার্তুজ, মাথায় গামছা বাঁধাই
বাবরি চুল, বটের বীজের মতো জ্বলজ্বলে বিনিদ্র চোখ, বিজয়োন্মুখ মুখ
আর হাস্যোজ্জ্বল ফুল্যঠোঁটের ঝলমলে ছবি তুলে নেওয়া ছাড়া?

ক্যামেরা ঘুরিয়ে নিন- অর্থাৎ এক কথায়
ছবি তুলতে করছি নিষেধ আপনাকে, সাংবাদিক সাহেব।
পৃথিবীর কোনো কলামিস্ট কোনো যুগে
পেরেছে কি টুকে নিতে ক্ষমতামাতাল বর্বর প্রভূর
বজ্রকঠিন চোখ রাঙানোকে অগ্রাহ্য করে যে বিদ্রোহী ছিঁড়ে দু’হাতের শৃঙ্খল
অথবা দাসত্বের দলিল তার আপাতালাকাশ আক্রোশ পেরেছে কি
টুকে নিতে সংবাদপত্রের সজীব পাতায়?
কলম যতই বলধর হোক, কোনো কবি
কোনো কালে পেরেছে কি লিখে নিতে
বেপরোয়া লড়াকু যোদ্ধার নাছোড়বান্দা আদর্শ, মৃত্যু মুখোমুখি দাঁড়িয়েও
পিছু না হাঁটার অঙ্গীকার, শোষক রাজার নিষ্ঠুর একতার বিরুদ্ধে অসহযোগ
পেরেছে কি লিখে নিতে তার নিজস্ব খাতায়?
আর ঝানু চিত্রকর আকাশের মতো প্রশস্থ ক্যানভাসে
এঁকে দিতে বিক্ষুব্দ দেশপ্রেমিকের হৃদপি-
যে স্পন্দনে কাঁপে
সেই ঝনঝন ঝনাৎকার সম কম্পন রেখা পেরেছে কি
এঁকে দিতে রং তুলির খোঁচায়?
ক্যামেরা ঘুরিয়ে নিন- অর্থাৎ এক কথায় ছবি তুলতে
করছি নিষেধ আপনাকে, সাংবাদিক সাহেব।

আপনার ক্যামেরার এপার্চার, আকাশচুম্বী জুমিং কৌশল
অত্যাধুনিক অভ্রভেদী ল্যান্স, পারবে না তুলে ধরতে আমার বুকের
লোকানো বিপ্লব, মুখের হাসির আড়ালের ক্রোধ, বাহুর পেশির সঞ্চিত শক্তি
পারবে না তুলে ধরতে ডিমকুসুম রক্তিম নয়নের
নেপথ্য তথ্য, আর মুষ্ঠিবদ্ধ আঙুলের বেষ্টনিতে যে ঝটিকাতুল্য চঞ্চলতা
নিয়ম না মানা উল্লাসে নাচে তার স্বতন্ত্র মুদ্রা। জানি....
আপনার ছবি তোলার যন্ত্রটা কারিশমা যতই দেখাক না কেন
বড়ো অপারগ আমার বুকের পাঁজরে
প্রতিশোধের যে উন্মত্ত দামামা বাজে
তার সুর, মগজের ভাঁজে
বিমূঢ় আস্ফালন নয়, যে দুর্দমনীয় বজ্রের কানাকানি
তার ভয়ংকর বহিঃপ্রকাশে বড়ো অপারগ। তাই...
ক্যামেরা ঘুরিয়ে নিন- অর্থাৎ এক কথায়
ছবি তুলতে করছি নিষেধ আপনাকে, সাংবাদিক সাহেব।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন